নড়াগাতীর সংবাদ ডেক্স
১৬ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১১.৪৫ ঘটিকায় খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে, জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উপলক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফীন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রথমে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি ইতিহাসের মহানয়ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান স্থপতি বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিতে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। অতঃপর অতিথিবৃন্দ আগত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আগাত অতিথিবৃন্দদেরকে বীরমুক্তি যোদ্ধারা এবং এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টি.কে হালদার খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফীনকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে প্রদান করেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে বলেন, “এই ভূখন্ডে আর্য, পাঠান, মোঘল, পর্তুগিজ, ইংরেজরা শাসন করেছে আমরা শোষিত হয়েছি। এই ভূখণ্ডের কুলো বধূ ও গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষের প্রার্থনা ছিল এই ভূখণ্ডে এমন একজন মানুষ দাও যিনি এই ভূখণ্ডের মানুষকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিতে পারে। সেই কুলো বধুদের স্বপ্ন সফল হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়ার নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতিকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন এবং সার্বভৌম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি ১৯৪৭, ১৯৪৯, ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ সালের আন্দোলন সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের ০৭ ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রু সৈন্যদের মোকাবেলা করার জন্য তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করার জন্য নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করেছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ভাষণ। কিন্তু তার পরিবার-পরিজন নৃশংসভাবে ১৫ই আগস্ট ঘাতকের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যসহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এটি আপনাদেরই নেতৃত্বে ও বীরত্বে স্বাধীন হয়েছে। যার স্বাধীনতার সুফল আমরা ভোগ করছি। আজ অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি এমন কোন সেক্টর নাই; যে সেক্টরে এদেশে উন্নয়ন হয়নি। যে দেশ থেকে আমরা পৃথক হয়েছিলাম- আজ সে দেশের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ। এমনকি আমাদের দেশটির বিরাট একটি অংশ মহান মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয়, সেনা ও অস্ত্র দিয়েছিল। আজ আমাদের পাশের দেশ ভারত তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শুধু তাই নয় তারাও জীবন দিয়েছিল এখন সেই দেশের তুলনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও মাথাপিছু আয় সকল সেক্টরে অভুতপূর্ব উন্নতি করছি।
আজকে এখানে উপস্থিত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন আপনাদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আপনারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রুপান্তর হয়েছে।
আপনারা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ সৃষ্টি করেছিলেন বলেই বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ প্রবাসে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। আজকে তারা লাল-সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। আজকে আপনারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে বিদেশে এই দেশটিকে সোনার দেশে পরিণত করার জন্য ও স্বাধীনতার স্বাদ দেওয়ার জন্য সকল ক্ষেত্রে উন্নতির সোপান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের দেওয়া লাল সবুজের যে পতাকার ভার যেন আমরা বহন করতে পারি, সেই দোয়া করবেন। আপনারা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন, যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি এবং কোন অপশক্তি যেন দেশটিকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। এই দেশটিকে সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিণত করতে চাই- এটি হোক আজকের এই বিজয় দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের স্প্রিট।”
এছাড়াও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে খুলনা রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জয়দেব চৌধুরী, বিপিএম-সেবা; খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, পিপিএম-সেবা; খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির; খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান এবং খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।