নিশ্চয় ঈমান ভঙ্গর কারণ রয়েছে, যেমন ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ আছে। যদি কোন ওযুকারী ওযু ভঙ্গের কোন একটা কাজও করে তবে তার ওযু ভেঙ্গে যাবে। তখন তার উপরে ওয়াজিব হল যে, সে আবার নতুন করে ওযু করবে, সেই রকম ঈমানের ক্ষেত্রেও।
ঈমান ভঙ্গকারী কারণসমূহ চার ভাগে বিভক্তঃ-
প্রথম কারণ: আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করাঃ-
ক) আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করা। যেমন- নাস্তিকরা করে থাকে এই বলে যে, স্রষ্টা বলে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই।
খ) যদি কেউ নিজেকে প্রভু বলে দাবী করে।
গ) এই দাবী করা যে, দুনিয়াতে অলীদের মধ্যে কিছু কুতুব আছেন যারা দুনিয়ার কার্যসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘ) কিছু কিছু সুফী পীরেরা বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টির মধ্যে আছেন।
দ্বিতীয় কারণঃ আল্লাহ যে মাবুদ তাকে অস্বীকার করা বা তাঁর ইবাদতে কোন শিরক করাঃ-
ক) এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলোঃ তারা যারা-সূর্য, চন্দ্র, গাছগাছালি, পশু পাখি, শয়তান ও অন্যান্য সৃষ্টির ইবাদতকারী।
খ) ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা এক আল্লাহর ইবাদত করে এবং তার ইবাদত করার সাথে সাথে অন্য সৃষ্টিরও ইবাদত করে থাকে যেমনঃ অলি আউলিয়াদের ইবাদত করে তাদের ছবি বা কবরকে সামানে রাখে।
গ) কিছু লোক, আউলিয়া বলে কথিত লোকদের কবরে আশ্রয় ও বিপদমুক্তি চায়। আর তাদের কাছে এমন সব জিনিস চায় যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো দেবার ক্ষমতা নেই। যেমনঃ রোগ মুক্তি, চাকুরী, ব্যবসা, সন্তান ইত্যাদি। ঐ সমস্ত মৃত ব্যক্তিদের বা মাজারের হাতে কোন ক্ষমতাই নেই। তারা অন্যদের কান্নাকাটি শুনতেই পায় না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
“আর তোমরা তাকে ছেড়ে অন্যদের যে ডাকছ তারা তো সামান্যতম জিনিসেরও অধিকারী নয়।
যদি তাদের কাছে দু’আ করো তারা তো তোমার দু’আ শুনতেই পায় না। আর যদি শুনত, কক্ষণই তোমাদের উত্তর দিত না। আর তোমরা যে শিরক করছ তাকে কিয়ামতের দিন তারা পুরাপুরি অস্বীকার করে বসবে। আর আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ এইরকম সাবধানও করবে না। (সুরা ফাতির, ৩৫:১৩-১৪)
ঘ) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন যে, মৃত ব্যাক্তিদের যে ডাকা হয় তা তারা শুনতেও পায় না। আর এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাদের নিকট দু’আ করা বড় শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের যে ইবাদত করত তাদের না কোন ক্ষতি করতে পারত, আর না ভাল করতে পারত। তারা বলত, এরা হচ্ছে আমাদের জন্য অল্লাহর নিকট শাফায়াতকারী হে নবী আপনি বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহকে এমন কোন কথা বলতে চাও যা আসমান ও জমিনের কেউ জানে না? সমস্ত পবিত্রতা তো আল্লাহর। আর এরা যে শিরক করেছে তিনি তার অর্ধেক উর্ধ্বে” ( সুরা ইউনুস,১০ : ১৮ )
“আর যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে আমরা তো শুধু এ উদ্দেশ্যে তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছে সেসব বিষয়ের ফায়সালা আল্লাহ অবশ্যই করে দেবেন। আল্লাহ এমন লোককে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও সত্য অস্বীকারকারী।” (সূরা যুমার, ৩৯:৩)
তৃতীয় কারণঃ আল্লাহর নামসমূহ অস্বীকার করা বা তাতে কোন সন্দেনপোষণ করাঃ-
ঈমান নষ্টকারী আমলের মধ্যে আছে, কোন মু’মিন কর্তৃক আল্লাহর সুন্দর নামসমূহকে অস্বীকার
করা। যেমন-আল্লাহ তা’আলা যে সব জানেন তা অস্বীকার করা, অথবা তার কুদরতকে বা তার জীবনকে বা শোনা বা দেখাকে বা তার রহমতকে অথবা তিনি যে আরশের উপর আছেন তাকে অথবা তার হাতকে অথবা চক্ষুদ্বয়কে অথবা অন্যান্য যে সিফাতসমূহ আছে, তার কোনটি অস্বীকার করা। আবার তা স্বীকার করতে যেয়ে তার কোন বিষয়কে পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যাবে না। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তার মত কিছু নেই, কিন্তু তিনি শুনেন ও দেখেন।” (সূরা শুরা, আয়াত নং ১১)
চতুর্থ কারণ: রসূলগণকে অস্বীকার বা তাদের সম্বন্ধে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করাঃ-
১) আমাদের রসূল (সাঃ)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করা। কারণ, মুহাম্মাদ (সাঃ) যে, আল্লাহর রসূল এই সাক্ষ্য দেয়া ইসলামের স্তম্ভের এক স্তম্ভ।
২) রসুল সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করা বা বার সত্যবাদিতা সম্পর্কে বা আমানত বা পবিত্রতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা। রসুল (সাঃ) -কে গালি দেয়া, অথবা কোন ঠাট্টা- বিদ্রূপ করা, অথরা তার অবমূল্যায়ন করা অথবা তার কার্যসমূহ সম্পর্কে কোন আজেবাজে কথা বলা।
৩) রসূল (সাঃ) এর কোন সহীহ হাদীস সম্পর্কে খারাপ কথা বলা বা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা অথবা তিনি যদি কোন খবর দিয়ে থাকেন তাকে অস্বীকার করা।
৪) অথবা কোন একজন রসূলকে অস্বীকার করা যাদের আল্লাহ তা’আলা প্রেরণ করেছিলেন আমাদের রসূল এর পূর্বে অথবা তাদের সময়ে সম্প্রদায়ের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল যা আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন বা রসূল সহীহ হাদীসে বর্ণনা করেছেন তা অস্বীকার করা।
৫) যারা রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পরে মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে। যেমন- মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী করেছে, হিজবুত তৌহিদের এমাম বায়েজিদ খান পন্নি ঘুরিয়ে দাবী করেছে।
৬) যারা রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এমন সব গুণে বিভূষিত করে যা আল্লাহ তা’আলা করেননি। যেমনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর নূরে সৃষ্টি।
৭) যারা রসূলুল্লাহ হতে এমন জিনিস পেতে ইচ্ছা করে যা দেবার মালিক আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ নয়। যেমনঃ সাহায্য চাওয়া, রোগমুক্তি অথবা এই জাতীয় কার্যসমূহ যা আজ মুসলিমদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আল কুরআনের দৃষ্টিতে এই জাতীয় কথাগুলো শিরক দ্বারা পূর্ণ। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সাহায্য কখনো আসতে পারে না আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ হতে।” (সূরা আন’ফাল, ৮:১০) আর রসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও এর বিরোধিতা করে বলেন- “যদি কিছু চাও আল্লাহর নিকটে চাও। আর যদি সাহায্য চাও তার নিকটেই চাও।” (তিরমিযী)
৮) তাবে আমরা রসূলগণের কোন মোজেযাকে অস্বীকার করি না। তবে যেটা আমরা অস্বীকারা করি তা হল তাদেরকে আল্লাহর শরীক স্থির করা। আল্লাহর নিকট যেভাবে দু’আ করি তাদের নিকটও একইভবে দু’আ করা কিংবা তাদের জন্য ওরস করা অথবা তাদের জন নজর-নেয়াজ, মানত পেশ করা। এমনকি তাদের কারো কারো মাজারে বা দরবারে টাক পয়সা দেয়া।
৯) যেমন অনেকে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কারণে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন।