সপ্তম শ্রেণির ‘শরীফার গল্প নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী
সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠী নানান বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতি হোক নানান সময়ে অরাজকতা করা বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার একটি প্রবণতা তাদের আছে। গতবছরও সেটা ছিল। একটি সংগঠন থেকে কিছুদিন আগে আমার কাছে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, কওমি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক এসেছিলেন। সেখানে তারা দাবি করেছেন, এখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়টি তারা আমাদের নজরে এনেছিলেন। আমরা যখন আলোচনা করেছি তখন দেখেছি শব্দটা ট্রান্সজেন্ডার নয়, শব্দটা থার্ড জেন্ডার। এটা আইনত স্বীকৃত যে, তৃতীয় লিঙ্গ সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা দেশের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, গল্প উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যদি এমনভাবে উপস্থাপন হয় যে, সেখানে বিভ্রান্তি এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয় তবে এ গল্পের উপস্থাপনা পরিবর্তন করা যায় কি না এই বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের প্রতি সম্মান রেখে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি ভিন্ন কোনো সুযোগ থাকে তাহলে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। এটা যেহেতু বিশেষায়িত বিষয়। আমরা পলিসি লেভেল সেটি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
নওফেল বলেন, উপস্থাপনে যদি কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে, যদি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার একটি গল্পের (শরীফার গল্প) পাতা জনসম্মুখে ছিড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে পাঠ্যপুস্তকের দুটি পাতা ছেড়েন তিনি।
বইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মাহতাব। এ সময় সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ টাকা দিয়ে বইটি বাজার থেকে কিনতে বলেন তিনি। পরে বইয়ের ট্রান্সজেন্ডারের গল্প থাকা দুটি পাতা ছিঁড়ে আবার দোকানে ফেরত দিতে বলেন।
ওই ঘটনার পর রোববার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাহতাব লেখেন, ‘আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে যে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস নিতে না যাই। আমি জানি না হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত তারা কেন নিল। আমাকে কোনো কারণ তারা দেয়নি।’
পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে তা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে এনটিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে।
মুহিবুল হাসান বলেন, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই যারা কারিকুলাম নিয়ে সমালোচনা করছেন তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। শিক্ষা কারিকুলামে রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।