বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশ হিসাবে স্বীকৃত এবং এই বিপদাপন্নতা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা এবং খরা সহ অন্যান্য দুর্যোগ দ্বারা ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। গড়ে প্রতি বছর দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরে একবার মারাত্মক বন্যায় দেশের ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। গড়ে বাংলাদেশে প্রতি ৩ বছরে একটি বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে যা ঘন্টায় ১০০ মাইলের অধিক বাতাসের তীব্রতা সম্পন্ন ও কয়েক মিটারের অধিক উঁচু জলোচ্ছাসের সৃষ্টি করে। এসব ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবনহানি, ঘরবাড়ি, জমি, জীবিকার ক্ষতির পাশাপাশি দেশব্যাপী জনগোষ্ঠীর স্থানচ্যুতি ত্বরান্বিত করছে, যেমন: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অধিকাংশ দুর্যোগকে তীব্রতাসম্পন্ন করে তোলে এবং নতুন দুর্যোগ সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানচ্যুতি প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন যেসব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে তা হচ্ছে:
* ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং জলোচ্ছাসের মাত্রা ও উচ্চতা বৃদ্ধি।
*বৃষ্টিপাতের তারতম্য, যা ব্যাপক এলাকাজুড়ে বন্যা এবং নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি করে। যার ফলশ্রুতিতে বসতবাড়ী, সম্পত্তি এবং কৃষি ভূমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
* হিমবাহ ও বরফের দ্রুত গলনের ফলে গ্রীষ্মকালেও নদীর পানি প্রবাহের উচ্চতা বৃদ্ধি।
* বাংলাদেশে উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে অপর্যাপ্ত ও অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতের কারণে খরার সৃষ্টি।
* সমুদ্রস্ফীতির ফলে উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যাওয়া এবং ভূগর্ভস্থ ও উপকূলীয় নদীতে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের ফলে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়া।
এসব দুর্যোগ বিশেষ ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দরিদ্রতম ও বিপদাপন্ন বাংলাদেশের উপর বেশী প্রভাব সৃষ্টি করে যেখানে পাঁচ কোটির বেশী মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে। বাংলাদেশ সরকার এই ভয়াবহ সংকট সম্পর্কে সচেতন রয়েছে যেহেতু শুধুমাত্র সমুদ্র স্ফীতির ফলে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দুই কোটি মানুষ ভিটে হারা/ স্থানচ্যুত হবে।
তথাপি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা এবং আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদের অভাবের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব মানুষ নিজস্ব ঘর, ভূমি ও সম্পত্তি হারায় তাদের নতুন জীবন নির্মাণে বর্তমানে কোন সমন্বিত উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত সকল মানুষ সর্ব প্রকার অধিকার সংরক্ষণ করে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মানবাধিকার আইনের আওতায় নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখে।
জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান পাঁচটি করণীয়
** সারা বাংলাদেশের জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষদের মনিটরিং প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে।
* চলমান জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আইন ও নীতিমালায় জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
*- জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারী খাস জমি বন্দোবস্তি স্বচ্ছ, কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।
* অকৃষি খাস জমি জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের মাঝে বরাদ্দ দিতে হবে।
* জলবায়ু স্থানচ্যুত মানুষের জন্য কার্যকর প্রত্যাবর্তন, স্থানান্তর ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।