শীতের তীব্র অনুভূতি, কাঁপছে দেশ
দেশের ১৩টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এসব জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। এর বাইরে রাজধানীসহ দেশের বড় অংশজুড়ে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তাপমাত্রার বিচারে শীতের প্রকোপ যতটা থাকার কথা এর চেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। একাধিক কারণে এবারের শীতের অনুভূতির তীব্রতা বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শীতের এই প্রকোপ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর মধ্যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এ অবস্থায় রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আবহাওয়া অফিস এদিন জানায়, দেশের ১৩টি জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলাগুলো হলো- রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া। এসব জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
শনিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুক্রবার কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা পড়ে।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
কেন শীতের এত অনুভূতি?
এবার শীতের অনুভূতি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। এর একাধিক কারণের কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, একদিকে রোদের দেখা নেই, পড়ছে ঘন কুয়াশা। অন্যদিকে কনকনে বাতাস বইছে। কমেছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য। ফলে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে পাঁচ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। টাঙ্গাইলে চার ডিগ্রির নিচে এবং ফরিদপুরে তিন ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। এছাড়া সিলেটে চার ডিগ্রির নিচে, রাজশাহীতে আট ডিগ্রির নিচে, রংপুরে ছয় ডিগ্রির নিচে, ময়মনসিংহে চার ডিগ্রির নিচে, খুলনা ও বরিশালে আট ডিগ্রির নিচে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। শীতের অনুভূতি বাড়ার অন্যতম কারণ।
আবহাওয়া অফিস জানায়, একইভাবে প্রায় বেশিরভাগ জেলায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আকাশে মেঘ না থাকায় উত্তরের হিমেল বাতাস সহজে নিচে নেমে আসাও একটি কারণ। এর আগে ডিসেম্বর মাসে শীত যখন অনুভূত হচ্ছিল না, তখন আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন, আকাশে মেঘ থাকলে ঠান্ডা বাতাস নিচে নামতে পারে না।
শীত বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ জানিয়ে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ পশ্চিবঙ্গজুড়ে উচ্চচাপ বলয় সক্রিয় আছে, ফলে বায়ুচাপ বাংলাদেশের দিকে প্রবেশ করছে। বাতাসের গতিবেগ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি থাকার কারণে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল ও খুলনার ওপরের দিকে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা- এসব অঞ্চলে শীতের অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়াও ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো উপরে উঠে যাচ্ছে, যেটা ভাইব্রেট (কম্পন) হচ্ছে।
তীব্র শীত আর কয়দিন?
এদিকে শীত নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারেনি আবহাওয়া অধিদফতর। সপ্তাহ শেষে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শীতের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী দুই দিন (রোব ও সোমবার) ঠান্ডা-ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। দিনের সঙ্গে রাতের তাপমাত্রাও অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া, সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে। ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির দিকে দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত থেমে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ২০ তারিখের পরে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আবার শুরু হতে পারে।