টমেটো কেন খাবেন !!
যদিও টমেটো একটি ফল, তবুও সারা বিশ্বে সবজি হিসেবেই পরিচিত টমেটো। টমেটো বাংলাদেশে বিলাতী বেগুন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বাজারে টমেটো সবজি হিসাবে বহুল প্রচলিত। সবজি হলেও টমোটোর মধ্যে ফলের অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় এটি রান্না না করেও খাওয়া যায়।
টমেটো আমাদের দেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি, তবে গ্রীষ্মকালেও টমেটো সাফল্যের সাথে চাষ করা যায় এবং পাওয়া যায়। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা সারাদেশে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি হিসেবে চলে আসছে।
সবজি হিসাবে এর ব্যবহার ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার সুপরিচিত। দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে টমেটো রপ্তানিরও প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আসছে। রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সসও বেশ পরিচিত হয়ে আসছে।
সর্বত্রই এটি জনপ্রিয় কারন এর আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার ফলে। এ জনপ্রিয় সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। আর এই টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৭-১০ কাপ টমেটো খেলে অনেকটা হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়। আর যদি পরিমিত তেল দিয়ে রান্না করে টমেটো খাওয়া হয় তাহলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। থ্রম্বোসিসের পরিমাণও কমায় এই টমেটো। চলুন জেনে নেই টমেটোর গুনাগুন সম্পর্কে।
টমেটোতে ভিটামিন এ, কে, বি ১, বি থ্রি, বি ফাইভ, বি ছিক্স, বি সেভেন ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে ফোলেট, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে।
নিয়মিত টমেটো খেলে যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়-
চুল ও ত্বকের জন্য ভালো : টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বকের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক পরিষ্কার এবং সতেজ করে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন এ চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে।
হাড়ের জন্য ভালো : টমেটোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস : টমেটো ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি’য়ের ভালো উৎস। এ দুটি উপাদান ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে শরীরকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এতে শরীর সুস্থ থাকে।
হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে : টমেটোতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ কারণে এ সবজিটি হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে : টমেটোতে ক্রোমিয়াম নামক এক ধরনের খনিজ থাকায় এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী।
অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে
আমরা তো জানি টমেটার কত গুন। আর এই টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন এবং ভিটামিন-এ, যা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং অ্যাজমা নিয়ন্তনে টমেটার গুরুত্ব অপরিসীম।
ক্যানসার রোধ করতে
টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- লাইকোপিন। তাই এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও ভিটামিন সি স্ট্রেস হরমোন কমাতে ভূমিকা রাখে। এ কারণে নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
রক্তশূন্যতা দূর করে : নিয়মিত দু-একটি করে টমেটো খেলে রক্তের কণিকা বৃদ্ধি পায়, রক্তশূন্যতা রোধ হয়। রক্ত পরিষ্কার থাকে। এছাড়া এটি হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভূমিকা রাখে।
টুকটুকে লাল পাকা টমেটো, অথবা কচকচে কাঁচা টমেটো। একই সাথে ফল এবং সবজি। আর এই টমেটোর খাবারটা পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই খুজে পাওয়া যাবে। রান্না করে বা কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া যায় এই টমেটো।
নিয়মিত টমেটো খান এবং অনেক রোগ-প্রতিরোধ করুন। তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।