আমাদের সামনে ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে যে, অনেক বিত্তবান লোক ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবির অধিকারী; কিন্তু সমাজের কাছে তার কোনো মর্যাদা নেই। পক্ষান্তরে সমাজের হতদরিদ্র বিত্তবৈভবহীন ব্যক্তি, সমাজ তাকে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে সমীহ করে। এমন সম্মানের সঙ্গে মানুষের প্রভূত ভালোবাসা মিশে আছে। ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, মূলত সম্মান বিনষ্টকারী কাজ থেকে দূরে থাকা সম্মান অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। সম্মান বিনষ্টকারী কাজগুলো হলো-
নির্লজ্জ কথা ও কাজ : বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা ও অশ্লীল কথা এবং কাজ চারিত্রিক কদর্যকে বৃদ্ধি করে, চারিত্রিক সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে। সুতরাং সম্মান বাড়ানোর জন্য অবশ্যই এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
অবৈধ উপার্জন করে বৈধ পথে খরচ : আমাদের দেশের ট্র্যাডিশন হলো বৈধ-অবৈধ পথে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে একটু সম্মানের জন্য এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ গড়ে তুলে। মানুষ তাকে সমীহ করে বটে; কিন্তু সত্যিকারার্থে তার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা থাকে না। তার আয়ের উৎস নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক কথা সমাজের প্রচলন ঘটে।
দ্বিমুখী নীতি : দ্বিমুখী নীতি মানুষের সম্মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কপট মানুষকে কেউ ভালোবাসে না। সে সমাজে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সম্মান পাবে তো দূরের কথা, মানুষের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না।
অহংকার ও গৌরব : অহংকার মানুষের সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করে। সমাজে অহংকারবশত যারা নাক উঁচু করে চলে, মানুষ তাদের থেকে দূরে অবস্থান করতে ভালোবাসে।
হিংসা-বিদ্বেষ : হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে নবী কারিম (সা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং পরস্পর শত্রুতা করবে না, পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ -সহিহ মুসলিম: ৬৪২৪
মিথ্যা বলা : কথায় কথায় যারা মিথ্যা বলে, মিথ্যা রচনা করে, তাদের মানুষ সম্মান করে না। সে যতই শিক্ষিত ও প্রভাবশালী হোক না কেন। সম্মানের পরিবর্তে সে সমাজে একজন পাক্কা মিথ্যুক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
লোভ-লালসা, কৃপণতা ও স্বার্থান্ধতা : সামাজিক সম্মানের জন্য অবশ্যই অতিমাত্রার লোভ-লালসা, কৃপণতা, স্বার্থান্ধতা, পরনিন্দা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা পরিত্যাগ করতে হবে। মানুষের প্রতি দরদি ও পরশ্রীপরায়ণ হতে হবে।
বেহুদা কথা ও কাজ : সুরা মুমিনুনে সফলকাম ব্যক্তির কয়েকটি গুণের অন্যতম একটি হলো ‘বেহুদা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করা।’ কোথাও বেহুদা কাজ হতে দেখলে ভদ্রলোকেরা তা পাশ কাটিয় চলে যান। মাত্রাতিরিক্ত কথা বললেও সম্মান ও মর্যাদার হানি হয়।
জুলুম-নির্যাতন : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যারা ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা শুরা: ৪০
অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা : কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা অভদ্রতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। কোরআন মাজিদে হেয় প্রতিপন্নতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সম্মান অর্জনের ক্ষেত্রে নিম্নের কাজগুলো করা। বিষয়গুলো হলো-
১. এমন কিছু করা, যা সত্যিই মানুষের কাজে লাগে; ২. কথা দিয়ে কথা রাখা; ৩. দোষ না করলে দুঃখ না করা; ৪. ভুল করলে স্বীকার করা এবং সংশোধন করা; ৫. অন্যের সময় নষ্ট না করা; ৬. না জেনে মন্তব্য না করা, প্রয়োজনে চুপ থাকা; ৭. অন্যের মতামতকে সম্মান জানানো; ৮. অহংকার না করা; ৯. অতি বিনয় পরিহার করা; ১০. সৎ থাকা; ১১. কথা ও কাজে মিল রাখা; ১২. সব সময় নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করা; ১৩. ইতিবাচক থাকা ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করা; ১৪. আবেগের বদলে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ১৫. সব সময় সত্যি কথা বলা এবং সাহস প্রকাশ করা।