অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী
ধারা ৩ : পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ-
(১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে।
(২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেইক্ষেত্রে সন্তানগণ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।
(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৪) কোন সন্তান তাহার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, কোন বৃদ্ধ নিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।
(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা এবং মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে নিয়মিতভাবে তাহার, বা ক্ষেত্রমত, তাহাদের সহিত সাক্ষাত করিতে হইবে।
(৭) কোন পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ে, সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার দৈনন্দিন আয়-রোজগার, বা ক্ষেত্রমত, মাসিক আয় বা বাৎসরিক আয় হইতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ পিতা বা মাতা, বা ক্ষেত্রমত, উভয়কে নিয়মিত প্রদান করিবে।
ধারা ৫ : পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করিবার দণ্ড।
(১) কোন সন্তান কর্তৃক ধারা ৩ এর যে কোন উপ-ধারার বিধান কিংবা ধারা ৪ এর বিধান লংঘন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে; বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
(২) কোন সন্তানের স্ত্রী, বা ক্ষেত্রমত, স্বামী কিংবা পুত্র-কন্যা বা অন্য কোন নিকট আত্নীয় ব্যক্তি—
(ক) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করিলে; বা
(খ) পিতা-মাতার বা দাদা-দাদীর বা নানা-নানীর ভরণ-পোষণ প্রদানে অসহযোগিতা করিলে—
তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিয়াছে গণ্যে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
পৃথিবীতে কেউ শিক্ষিত হয়ে জন্মায় না। মানবসন্তানকে সোনার মানুষে পরিণত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সন্তানের এই শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাতা-পিতার মাধ্যমেই। তাই বলা হয়, ‘মাতা-পিতা হলেন আদর্শ শিক্ষক, আর পরিবার হলো আদর্শ বিদ্যালয়।’ মাতা-পিতা সন্তানের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেন, যে গুরুদায়িত্ব পালন করেন, তা তুলনাহীন। সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ থেকে সন্তান স্বনির্ভর হওয়া পর্যন্ত মাতা-পিতা তার লালন-পালন, ব্যয়ভার বহনসহ সব সময় তাঁর পাশে থাকেন।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা মাতা-পিতার অধিকার সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনেও মাতা-পিতার অধিকার সম্পর্কে বিশেষ বর্ণনা রয়েছে। মহানবী (সা.) মাতা-পিতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন। মাতা-পিতার সন্তুষ্টির ওপর পরকালে মুক্তির শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মাতা-পিতার অধিকার পালন মুক্তি ও সৌভাগ্যের সোপান।
পৃথিবীতে মানবসন্তান জন্মগ্রহণ করে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে। সে পারে না চলতে, পারে না কিছু বলতে। মা বুকের দুধ পান করিয়ে তাকে বড় করেন। পিতা তার সেবার সব উপকরণ জোগান দেন। আদর-যত্ন, স্নেহ, মায়া-মমতায় তাকে বড় করে তোলেন। নিজেরা কষ্ট করে হলেও সব দিক থেকে সন্তানকে নিরাপদে রাখেন।
মমতাময়ী মা মাতৃস্নেহে সন্তানকে বড় করেন। সন্তানকে কথা বলতে শেখান ও হাঁটাচলায় তাকে সাহায্য করেন। এভাবেই মাতৃস্নেহে একটি শিশু বড় হতে থাকে। সন্তান যেখানেই থাকে, মা তাকে চোখে চোখে রাখেন। সন্তানের কোনো সমস্যা বা রোগবালাই হলে সবার আগে মাতা-পিতা তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ান, সন্তানের জন্য বিচলিত হয়ে যান। সন্তানের থাকা-খাওয়া, পড়ালেখা, খেলাধুলা, চলাফেরা ইত্যাদি এমন কোনো কাজ নেই, যাতে মাতা-পিতা অবদান রাখেন না।
মাতা-পিতার সঙ্গে করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তাদের মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পরে তার বুকের দুধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই।’ (সূরা : লোকমান,আয়াত : ১৪)
মাতা-পিতা হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করবেন এমন আচরণ প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ। সন্তান যেকোনো প্রতিকূলতায় তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক আচরণ দেখাতে বাধ্য। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা না করতে ও মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাদের উভয়ই বা কোনো একজন তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে (কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে) তাদের ‘উফ্’ বলো না। তাঁদের ধমক দিয়ো না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সূরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক! ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত (অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক)। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মাতা-পিতা উভয়কে অথবা তাঁদের কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেলো,অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর : ২৫৫১)
মা-বাবাকে সুখী রাখতে কঠিন কিছু করতে হয় না। যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করেন, অফিস থেকে ফিরে একটু তাঁদের খোঁজখবর নিলেই তাঁরা খুশি। সারাদিনের ঘটনাগুলো তাঁদের কাছে শেয়ার করুন। ছুটির দিনে শুধু ছেলেমেয়েকে না নিয়ে সবাই মিলে ঘুরতে যান। তাদের ছোটোখাটো সারপ্রাইজ দিন। মর্নিং ওয়াকে তাঁদের সঙ্গী হতে পারেন, এতে তাঁরা ভালো অনুভব করবেন। পারিবারিক যে কোনো সিদ্ধান্ত তাঁদের অবহিত করুন।
🇧🇩 আপনার প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন:🇧🇩
অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা। এলএলবি (অনার্স), এলএলএম, অ্যাসোসিয়েট ( ড. খালেদ এইচ. চৌধুরী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বিরোধ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, DMS), স্থায়ী ঠিকানা : কালিয়া,নড়াইল। চেম্বার ঠিকানা :১১/১, কলাবাগান ১ম লেন, শহীদ আব্দুল মতিন রোড, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ।
চেম্বার -২ : রুম নং ৩০২০ (২য় তলা) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যানেক্সি ভবন রমনা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।মোবাইল: +88 01737 386689 ই-মেইল: jakiamimchowdhury@gmail.com