সরকারি খাস জমি লিজ নেওয়ার নিয়ম।
অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী
শুধুমাত্র অব্যবহৃত সরকারি খাসজমি লিজ দেয়া যায়। কোনো বিশেষ কারনে যদি আপনি সরকারি জমি লিজ নিতে চান তাহলে আপনাকে আবেদনের মাধ্যমে জমি লিজ নিতে হবে।
জমি লিজ নেওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে সরকারি জমি লিজ নেয়া বলতে সরকার বা সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন কোনো ভূমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেয়াকে বোঝায়।
জমি লিজ নেওয়ার জন্য অবশ্যই জমিটি খাস ও বিরোধমুক্ত হতে হবে। আরও পড়ুন- খাস জমি চেনার উপায়।
বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের খাস জমি গুলোর তত্ত্বাবধায়ক। বিভিন্ন উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে বন্দোবস্তের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান জমি থেকে সরকারি জমি লিজ দেয়ার নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সরকারি জমি বা খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন আইন, প্রবিধান এবং পদ্ধতি প্রনয়ণ করা হয়েছে। সরকারি জমি লিজ নেওয়ার জন্য সকল ধরনের চুক্তি, স্বাক্ষর, মেয়াদ, ফি ইত্যাদি তথ্য সঠিক ভাবে জেনে এরপর আবেদন করার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।
লিজ নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বাংলাদেশ সরকার কতৃক নিয়ন্ত্রিত ভূমি বা খাস জমি সাধারণ জনগণের ব্যবহার করার অনুমতি নেই। তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সরকারি জমি লিজ বা বন্দোবস্ত পেতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আবেদন করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।
সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা হলো:
আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র;
জমি লিজ নেয়ার আবেদন ফরম;
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার বা চেয়ারম্যান কতৃক সত্যায়িত করা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক প্রদত্ত নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট;
লিজ নিতে ইচ্ছুক জমির সকল ধরনের রেকর্ড বা বিবরণ।
সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম
যেকোনো উদ্দেশ্যে সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য সরকারি কিছু নিয়ম মেনে আবেদন করতে হয়। প্রথমেই আবেদনকারীকে জমি লিজ নেয়ার সকল শর্ত পূরণ করতে হবে। এরপর নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে একটি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এককালীণ বা বাৎসরিক ভাড়া প্রদানের জন্য জমি লিজ নেয়া হয়।
চলুন সরকারি জমি লিজ নেয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক।
ধাপ ১: আবেদনের শর্ত পূরণ করুন
সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য আগ্রহীকে বা আবেদনকারীকে অবশ্যই সরকার কতৃক নির্ধারিত শর্তগুলো পালনের প্রমান দিতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ভূমি ব্যবহারের বিধিনিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি যোগ্যতা পূরণ করতে পারার প্রমান দেয়া অত্যাবশ্যক।
ধাপ ২: লিখিত আবেদন
সরকারি জমির সকল কিছু ভূমি মন্ত্রণালয়ের কতৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট সরকারি কতৃপক্ষের কাছে আবেদন বা দরখাস্ত জমা দিতে হবে।
আবেদন করার সময় প্রস্তাবিত জমির ব্যবহার, লিজের সময়কাল এবং এই বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ধাপ ৩: লিজ নেয়ার ফরম পূরন
সরকারি জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য বা লিজ নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি আবেদন ফরম পূরন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ভূমি অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে বা অনলাইন থেকে খাস জমি লিজ নেওয়ার ফরম ডাউনলোড করে তা সঠিক তথ্য দ্বারা পূরণ করে তা জমা দিতে হবে।
ধাপ ৪: আবেদন যাচাইকরণ
আপনার সরকারি জমি লিজ নেয়ার আবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে।
আপনার আবেদনটি বিভিন্ন পরিস্থিতি যেমন ভূমি ব্যবহার, পরিবেশগত প্রভাব, আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, ভূমি ব্যবহারের সম্মতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে যাচাই বা মূল্যায়ন করা হবে।
ধাপ ৫: জমি লিজের চুক্তিনামা সম্পাদন
জমি লিজ নেয়ার আবেদন অনুমোদিত হলে সরকার ও আবেদনকারীর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিনামায় লিজ নেয়ার শর্তাবলী, ভাড়া প্রদান, জমি ব্যবহারের বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী উল্লেখ করা থাকে।
আবেদনকারী চুক্তিনামায় উল্লেখিত সকল তথ্য জেনে এবং বুঝে তা মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে লিজ গ্রহণ করতে পারবে।
ধাপ ৬: ভাড়া বা লিজ ফি প্রদান
যেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি জমি লিজ নিবে তাকে লিজ নেয়ার নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারকে ভাড়া বা লিজ ফি প্রদান করতে হবে। ভাড়ার পরিমান বা লিজ ফি জমির অবস্থান, আকার এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারন করা হয়ে থাকে।
জমি লিজ নেওয়ার চুক্তিনামা
বাংলাদেশে সরকারি জমির লিজ নেয়ার জন্য চুক্তিনামা হলো আইনগত ভাবে একটি বাধ্যতামূলক দলিল যা সরকারি মালিকানাধীন জমি ব্যবহারের জন্য সরকার ও আবেদনকারীর মধ্যে শর্ত ও আইনগত ভিত্তি। তবে এই চুক্তিনামা জমির প্রকৃতি এবং এর সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
তাই জমি লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে এই চুক্তিনামা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমি লিজ চুক্তিনামায় প্রধান বিষয় গুলো হলো:
এই চুক্তিনামা সরকার ও আবেদনকারীর লেনদেনের সাথে জড়িত এবং এসকল বিষয় চিহ্নিত করে। এদের সকল ধরনের প্রাসঙ্গিক বিবরণ এতে উল্লেখ থাকে।
লিজ দেয়া জমির সীমানা, এলাকা, অবস্থান এবং বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সহ স্পষ্ট ও বিশদ বিবরণ চুক্তিতে প্রদান করা হয়।
চুক্তিতে লিজ বা বন্দোবস্ত পাওয়ার সময়কাল উল্লেখ থাকে। লিজের শুরুর তারিখ, শেষ তারিখ ও কিছু নবায়নযোগ্য শর্ত সাপেক্ষ এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
লিজ বা বন্দোবস্ত যে উদ্দেশ্যে যেমন কৃষি, বাণিজ্যিক, আবাসিক, শিল্প বা অন্য কোনো কারনে নেয়া হয়েছে এবং ব্যবহার করা হবে তা চুক্তিতে উল্লেখ থাকে।
অনুমোদিত জমির ব্যবহারের জন্য সরকার কতৃক প্রদত্ত বিধিনিষেধ বা শর্ত এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
চুক্তিতে ভাড়ার পরিমান বা লিজ ফি সরকারকে প্রদান করা, অর্থ প্রদানের পদ্ধতি, সময় এবং ভাড়া বৃদ্ধির সকল বিধান দেয়া থাকে।
লিজ বা বন্দোবস্ত পাওয়া জমির রক্ষনাবেক্ষন, মেরামত কর, প্রযোজ্য আইন ইত্যাদি সম্পর্কিত দায়িত্বগুলো নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা থাকে।
লিজ প্রাপ্ত জমির ভাড়া না দেয়া, চুক্তি ভঙ্গ, শর্ত লঙ্ঘন, জমি হস্তান্তর ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা এই চুক্তিনামায় লেখা হয়ে থাকে যা মেনে চলা অত্যাবশ্যক।
সরকারি খাস জমি লিজ নিতে কত টাকা লাগে?
জমি লিজ নেয়ার খরচ জমির অবস্থান, ব্যবহারের উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
জমি লিজ পেতে কত সময় লাগে?
বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং ডকুমেন্টস এর উপর ভিত্তি করে প্রায় ২১ দিনের মধ্যে সরকারি জমি লিজ নেয়া যায়।
সরকারি জমির লিজের মেয়াদ কতদিন?
সরকারি জমি লিজ বা বন্দোবস্ত পাওয়ার পর তার মেয়াদ ৩০ বছর থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
🇧🇩 আপনার প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন:🇧🇩
অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা। এলএলবি (অনার্স), এলএলএম, অ্যাসোসিয়েট ( ড. খালেদ এইচ. চৌধুরী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বিরোধ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, DMS), স্থায়ী ঠিকানা : কালিয়া,নড়াইল। চেম্বার ঠিকানা :১১/১, কলাবাগান ১ম লেন, শহীদ আব্দুল মতিন রোড, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ।
চেম্বার -২ : রুম নং ৩০২০ (২য় তলা) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যানেক্সি ভবন রমনা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।মোবাইল: +88 01737 386689 ই-মেইল: jakiamimchowdhury@gmail.com