শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পতিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দুর্ভিসদ্ধিকে সামনে রেখে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে খুলনা বিএনপি’র নামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব মো. শফিকুল আলম তুহিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে খুলনা মহানগর বিএনপি নিয়ে ষড়যন্ত্র করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন। অন্যথায় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করলে সে দায়ভার দল থেকে পদত্যাগী ও অব্যহতিপ্রাপ্তদেরই বহন করতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, খুলনা বিএনপি নামে কোনো অনুমোদিত কমিটি নেই। হাজী মহসিন রোডে বিএনপি’র কোনো কার্যালয় নাই; সেখানে বসে শুধু ষড়যন্ত্রই হচ্ছে বলে দৃশ্যমান হলো। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি এবং ২০২২ সালের ১ মার্চ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নিধারক ফোরামের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়ায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি। এরপর দীর্ঘদিন দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসর ও নিষ্ক্রীয়দের পদত্যাগের নাটক সাজিয়ে গণমাধ্যমের সামনে বিএনপিকে হাস্যস্কর পরিস্থিতির মুখোমুখী করার অপচেষ্টা করেছিলেন। এখন তাদের বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদ আছে কি-না সন্দেহ! এ অবস্থায় ‘খুলনা বিএনপি’ নামের ব্যানার ব্যবহার করে দলে অবাঞ্চিত ব্যক্তির সভাপতিত্বে সভা করে খুলনা মহানগর বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিষোদগার করা সম্পুর্ণ অসাংগঠনিক, বিবেকবর্জিত ও রাজনৈতিক নিষ্ঠাচার বর্হিভূত গর্হিতকর পরনিন্দা চর্চা ছাড়া কিছুই নয়। ভবিষ্যতে এধরণের অপপ্রচার করে বিএনপি’র ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালালে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা দাঁত ভাঙা জবাব দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনের পাশাপাশি খুলনা মহানগর বিএনপি ১১জন যুগ্ম-আহবায়কের সমন্বয়ে সাংগঠনিক উপকমিটি গঠন করে তৃণমুলে ত্যাগী-পরীক্ষিত ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়দের মাঝে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ প্রদান করা হয়। তাদের সমন্বয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। তৃণমূলের ওইসব ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন। ওয়ার্ড বিএনপি’র নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে থানা বিএনপি’র আহবায়ক/সদস্য সচিবসহ শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছিলেন। এভাবে নিষ্কলুষ প্রভাবমুক্ত ও শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে মহানগরীর ৩৪টি ইউনিটের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি’র গঠিত নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ব্যালট ভোটের মাধ্যমে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন খুলনা মহানগর বিএনপি’র জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নিকট অতীতে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে এসব কমিটি বের করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়েই ঘোষণা করতেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনীর হিংস্রতায় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও একদিকে সরকার পতন আন্দোলন, অন্যদিকে ঘরগোছানোর নিরন্তর কাজ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি। গত বছর ২৮ অক্টোবরের পর থেকে অর্ধশতাধিক মামলায় বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক ঘর-বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে দিনাতিপাত করেছেন। তারমধ্যেও খুলনায় অনুষ্ঠিত চারটি বিভাগীয় মহাসমাবেশ, ইউনিয়ন পদযাত্রাসহ সকল কর্মসূচি শতভাগ সফলতার কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুলনা মহানগর বিএনপি’র প্রশংসা করেছেন। ঢাকার মহাসমাবেশে খুলনার নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন ছিল মাইলফলক। যার ফলশ্রুতিতে মাফিয়া রানী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন নিশিরাতের অবৈধ সরকার পতন আন্দোলনকে তরান্বিত করেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মতো খুলনা মহানগর বিএনপি’র বর্তমান নেতৃত্ব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে না রেখে যুগ্ম-আহবায়কদের প্রধান করে সাংগঠনিক উপকমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন, অভিযোগ সেল, দপ্তর এবং মিডিয়া সেল গঠন করে সংগঠনকে সুবিন্যাস্ত করেছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পালায়নের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন হলে খুলনায় প্রশাসন বলে যখন কিছু ছিল না; তখন খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের দিয়ে দিনরাত পাহারা দিয়ে খুলনা মহানগরীর সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ ‘খুলনা বিএনপি’ নামের তথাকথিত ব্যক্তিরা খুলনা মহানগর বিএনপি সম্পর্কে কল্পকাহিনী সাজিয়ে বিষোদগার গণমাধ্যমে প্রকাশ করিয়েছেন; যা সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
দখলদারিত্বের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে না পারলে অবান্তর অভিযোগ উপস্থাপনের দায়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে খুলনা মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, খুলনাবাসী স্পষ্ট করেই জানেন- কেসিসি’র ২১নং ওয়ার্ডের আওয়ামী কাউন্সিলর স্বপন ও ২৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আ’লীগ নেতা তপন এবং আজাদ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবসায়িক অংশীদার কে ছিলেন? খুলনায় আ’লীগের ছত্রছাঁয়ায় লেজুড়বৃত্তির রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে বিএনপিকে কে.ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে কে বন্দী করে রেখেছিলেন? দুই বছর মেয়াদী কমিটিতে আপনি কিভাবে দুই যুগ কাটিয়ে দিয়েছিলেন? নেতৃত্ব বিকাশিত হবার পথ রুদ্ধ করে আপনি কিভাবে ১৯৯২ সাল থেকে ১৭ বছর নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৯ সাল থেকে একযুগ সভাপতির চেয়ার আঁকড়ে রেখেছিলেন। সেই মানুষের মুখে খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির দুই বছরের মূল্যায়ন অর্বাচিন ছাড়া আর কি হতে পারে? অপপ্রচারের পথ পরিহার করে খুলনা মহানগর বিএনপি’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী পুনর্বাসনের দিবাস্বপ্ন না দেখে সুস্থ অবসর জীবন-যাপনের আহবান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। খবর বিজ্ঞপ্তর।