অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী
আমাদের দেশের ফৌজদারি আইনের ৫৬১ ধারায় বৈবাহিক ধর্ষণ এর কথা বলা হয়েছে কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণ নামের অপরাধের বর্ণনা দেয়া হয়নি। ধর্ষণ সংক্রান্ত ধারা হচ্ছে দন্ডবিধি ১৮৬০’র ৩৭৫, ৩৭৬ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’র ধারা ৯। দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা বলছে, যদি কোনো বিবাহিত মেয়ের বয়স ১৩ বছরের কম না হয় তাহলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর যৌনসঙ্গম ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না৷ এছাড়া দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নারী বা মেয়েকে যদি তার স্বামী ধর্ষণ করেন, আর ওই নারী বা মেয়ের বয়স যদি ১২ বছরের কম হয় তাহলে স্বামীর শাস্তি হবে৷ আবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারার ব্যাখ্যায় বৈবাহিক ধর্ষণ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি৷
কিন্তু এই ধারা গুলোর কোথাও বৈবাহিক ধর্ষণের কথা বলা হয়নি, সুতরাং এর শাস্তির বর্ণনা দেয়া তো দূরের ব্যাপার। বরং দন্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারায় রেপের সংজ্ঞা থেকে বৈবাহিক ধর্ষণ ব্যাপারটাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে ৫ রকম উপাদানের কথা বলা হয়েছে। একটা দৃশ্যে বলা আছে একজন ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়, যার বয়স কিনা ১৩ বছরের কম' না, সেই ক্ষেত্রে তা কখনো ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না।
Anzyban vs State of Kerala, AIR 2009 বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলায় বৈবাহিক ধর্ষণকে যথেষ্ট যুক্তিগ্রাহ্য কারণ বলে রায় দিয়েছিল কেরল হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চে ২ বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত নয়। যদিও এই বিষয়টিকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে ফেলা হয়’। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘শরীরই হোক কিংবা আত্মপরিচয়, স্ত্রীর কোনও কিছুর উপরই কর্তৃত্ব চালাতে পারেন না স্বামী। স্ত্রী-শরীরকে স্বামী যদি নিজের সম্পত্তি ভাবেন এবং তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে সঙ্গমে লিপ্ত হন, তাহলে সেটা বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়’।
Amir Mehmud VS state, AIR, 2018 মামলায় বিচারপতি রাজীব শাকধের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন স্বামী হোক বা অন্য কেউ, ধর্ষণের অপরাধ সবার ক্ষেত্রেই সমান হওয়া উচিত। আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ অপরাধ বলে গণ্য করা না হলেও, একাধিক যুক্তি দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন স্বামীকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করতে আইনে কোনও বাধা নেই।
Boishwa vs State of Karnataka মামলায় মন্তব্য করেন,”আইনত যৌনকর্মীরা না বলতে পারেন, বিবাহিত মহিলা না। বৈবাহিক ধর্ষণ মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি, স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌন মিলনকে মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) ও আইন লঙ্ঘন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
বিবাহিত বা অবিবাহিত যে কোনও মহিলার সাথে জোরপূর্বক বা অসম্মতিমূলক যৌন কার্যকলাপ বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ধারা ৩ (গ) অনুযায়ী "যৌন নির্যাতন" অর্থে যৌন প্রকৃতির এমন আচরণও অন্তর্ভুক্ত হইবে, যাহা দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্ভ্রম, সম্মান বা সুনামের ক্ষতি হয়;
বৈবাহিক ধর্ষণ যদি ধর্ষণ না ও হয় বিবাহিত নারীকে যৌন নির্যাতন করলে তা এই আইন এর অধীনে অপরাধ।
🇧🇩 আপনার প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন:🇧🇩
অ্যাডভোকেট জাকিয়া মিম চৌধুরী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা। এলএলবি (অনার্স), এলএলএম, অ্যাসোসিয়েট ( ড. খালেদ এইচ. চৌধুরী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস বিরোধ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, DMS), স্থায়ী ঠিকানা : কালিয়া,নড়াইল। চেম্বার ঠিকানা :১১/১, কলাবাগান ১ম লেন, শহীদ আব্দুল মতিন রোড, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ।
চেম্বার -২ : রুম নং ৩০২০ (২য় তলা) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যানেক্সি ভবন রমনা, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।মোবাইল: +88 01737 386689 ই-মেইল: jakiamimchowdhury@gmail.com
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মামুন হাচান। মফস্বল সম্পাদক: শেখ মাহাবুব আলম। বার্তা সম্পাদক: এম এম হাচান। উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান। সহকারী বার্তা সম্পাদক: চৌধুরী জুয়েল রানা। খুলনা অফিস: মুজগুন্নী খালিশপুর খুলনা। নড়াইল অফিস: নড়াগাতী থানা পূর্বপাড় বাজার, নড়াগাতী, নড়াইল যোগাযোগ: 01728-060690, 01933-200080, 01715422025 , ইমেইল: naragatirsangbad@gmail.com
Copyright © 2024 নড়াগাতীর সংবাদ. All rights reserved.