নিজস্ব প্রতিবেদক
খুলনা নগরীর শিরোমণি বাদামতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএ খুলনা দপ্তর। দেশে সড়ক পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের খুলনা সার্কেল (বিআরটিএ)তে তদারকি হ্রাস পাওয়ায় কার্যালয়ে প্রকাশ্যে চুক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স সহ দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সমালোচনার জন্ম দেয় অফিসটি। কিন্তু এমন সব অভিযোগ যে এতো অল্প সময়ের মধ্যে সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে দেয়া সম্ভব সেটা প্রথম বারের মতো প্রমাণ করলেন সদ্য যোগদানকৃত খুলনা বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) উসমান সরওয়ার আলম। গত ২০/১১/২৪ ইং তারিখে তিনি খুলনা সার্কেল অফিস যোগদান করে প্রতিবেদকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। অত্র কার্যালয়ের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপকালে সক্রিয় দালাল চক্র সম্পর্কে অবগত করলে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) উসমান সরওয়ার আলম বলেন,”আমি দালাল চক্র দেখতে চাই না, আমি দালাল চক্র নির্মূল চাই। এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি যা যা করার আমি সেটাই করবো”। পরে গত ২৪/১১/২৪ ইং তারিখে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় “খুলনা বিআরটিএ অফিসে দালালের ছড়াছড়ি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশের মাত্র ০১ মাস পর সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সরজমিনে পরিদর্শন করলে দেখা যায় সেখানে এক ভিন্ন রূপ। চেষ্টা ও সঠিক কর্মদক্ষতা থাকলে যে কর্মের মাধ্যমে মানুষ এমনকি সৃষ্টিকর্তার মন জয় করা যায় সেটা না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না। দালাল সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যালয়ে প্রধান ফটক সরিয়ে বিকল্প ফটক ব্যবহার, কার্যালয়ের সামনে অবাঞ্ছিত লোকজন শূন্য, প্রতিটি সেবাদান কক্ষে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে নোটিশ, দেয়ালে ঈমান ও আমলের নিয়ম-কানুন, অবাঞ্ছিত লোকের প্রবেশ নিষেধ সহ একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের মোবাইল নম্বর সম্বলিত কাগজ রীতিমতো নজরে আসার মতো। অতিরিক্ত গার্ড দিয়ে সন্দেহভাজনদের তদারকি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় এক অভাবনীয় পরিবর্তন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি তার অফিসকে আসলেই দালাল মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়েছেন। গোপনে তার সেবা কার্যক্রম জানতে গিয়ে দেখা যায়, যেকোনো সেবা গ্রহীতাদের ডেকে ডেকে তিনি সঠিক পরামর্শ দিয়ে দ্রুততার সাথে কাজ সমাধান করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। ছালাম বিনিময়ে চেয়ারে বসতে বলছেন সমস্যার কথা শুনে নিজে গিয়ে সমাধান করছেন। বিআরটিএ কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে যে সমস্ত কর্মকর্তা এখানে এসেছেন তাদের থেকেও বর্তমানে সহকারী পরিচালক এডি স্যার একটু বেশি ব্যতিক্রমী। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার তার কাজকে খুব ভালোবাসেন যতক্ষণ না পর্যন্ত স্যারের কাজ শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি অফিস ত্যাগ করেন না এমনকি রাত দশটা পর্যন্ত আমি স্যারকে কাজ করতে দেখেছি। আমাদেরকে বার বারই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে বলেন এবং কোন অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন না করতে নিষেধ করেন। স্যারের মতো একজন ভালো মানুষ আমাদের অফিসের দায়িত্ব পাওয়ায় আমরা সত্যিই নিজেদের গর্ববোধ করি। পরে পুনরায় খুলনা বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিঃ উসমান সরওয়ার আলম এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, বিআরটিএ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সার্কেল অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য, বিভিন্ন অনিয়মের মতো বিষয়গুলো আসলেই অস্বীকার করার মতো নয়।
কেউ কেউ এই দূর্ণীতিতে জড়ায় তবে আমার অফিসের যদি কেউ জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি আছি। তবে খুলনা বিআরটিএতে যোগ দেয়ার পর থেকেই আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি এই অফিসের বিআরটিএ সম্পর্কে মানুষের এসব নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন ঘটাতে। আমি দেশের যেখানে কর্মরত ছিলাম সেখানেই চেষ্টা করেছি এবং যেখানেই যাবো সেখানেই আমার এই চেষ্টা অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ। কথায় নয়, কাজ দিয়ে এ পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যদি সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় তবে নিরলসভাবে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা পাওয়া সম্ভব।
সর্বশেষ কার্যালয়ের ভেতরে সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং বাইরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সহ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলেও জানান। খুলনা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক উসমান সরওয়ার আলম এর অভাবনীয় সাফল্যের জন্য সেবা গ্রহীতা সহ অত্র কার্যালয়ের কর্মচারী কর্মকর্তাদের বর্তমানে খুশির জোয়ার বইছে। কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা গ্রহীতরা দীর্ঘদিন পর সৎ কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের সকল সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন।