নড়াইলে পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে আদাচাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে । দামী এই মসলার উৎপাদন বাড়ায় আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহীত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া যায়। কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ির উঠান কিংবা পতিত, নিচু জলাশয় জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে চাষিরা।
অল্প খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় বস্তায় আদা চাষ করছেন নড়াইলের প্রত্যন্ত বামনহাট গ্রামের কৃষানী মল্লিকা রায়। বসতভিটার পাশে নীচু জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদার চাষ করেছেন। সারাবছর পানিতে ডুবে থাকা পতিত জমিতে বস্তার মধ্যে আদার ব্যাপক ফলন হয়েছে। ৯ মাসের এই ফসলে ১৫ লক্ষ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
কৃষানী-মল্লিকা রায় জানান, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় নড়াইল কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আদা চাষ শুরু করেছি। সাড়ে ৩ একর জমিতে সিমেন্টের ফেলে দেয়া বস্তায় সার মাটি দিয়ে ৫০ গ্রাম করে ১০ হাজার বস্তায় আদা লাগিয়েছি। সারা বছর এই জমিতে পানি থাকে এখানে অন্য কোন ফসল হয়না, গাছ ভালো হয়েছে ফলন পাবো।
৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ হবে এমনটি আশা করছি। এলাকার কৃষানী দিপ্তী রানী বিশ্বাস বলেন, মল্লিকার রায়ের এই উদ্যোগ দেখে আমি অনেক খুশি । তার চাষ দেখে ১৬ বস্তায় আদা চাষ করেছি।
গাছ ভালো হয়েছে। আগামী বছর বেশি করে লাগাবো। গ্রামের আশেপাশের লোকদের এই ভাবে আদা চাষ করার পরামর্শ দেব। পরিত্যক্ত জমিতে এদের দেখাদেখি এলাকায় ইতিমধ্যে ছোট-বড় আরো কয়েক বাড়িতে শুরু হয়েছে বস্তায় আদাচাষ।
কৃষক সুজিত বিশ্বাস বলেন, মল্লিকার আদা চাষ দেখে আমার ভালো লাগে আমি এবার ২০ বস্তায় আদা লাগিয়েছি।উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস জানান, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে পারেন। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যাবে। খরচও তুলনা মূলক কম। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা কোনও জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ছায়াযুক্ত জায়গাতেও এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। সাধারণত বাঁশ বাগানের তলায় কোন ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। চাষের পদ্ধতি প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৫০ গ্রামের একটি করে আদা রোপন করতে হবে। সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার উপর ঢেকে দিয়ে রাখতে হবে। এতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসা শুরু করে। আদা চাষ করতে খরচ কম আবার রোগবালাই কম হওয়ায় অধিক লাভ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন কৃষি কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রোকনুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলায় প্রায় ২৩ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে তার মধ্যে ৩০ হাজার বস্তায় বারি-২ আদা চাষ হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আদাচাষ জনপ্রিয় হওয়ায় এবছর মোট আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩’শ ৫০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুন। সাধারন চাষে প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৮’শ গ্রাম আদা হলেও বস্তায় দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ফলানো সম্ভব। সরকারী অনুদানে কৃষকদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করা গেলে আদাচাষে সফালতা সম্ভব, এতে করে আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে কৃষকেরা লাভবান হবেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মামুন হাচান। মফস্বল সম্পাদক: শেখ মাহাবুব আলম। বার্তা সম্পাদক: এম এম হাচান। উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান। সহকারী বার্তা সম্পাদক: চৌধুরী জুয়েল রানা। খুলনা অফিস: মুজগুন্নী খালিশপুর খুলনা। নড়াইল অফিস: নড়াগাতী থানা পূর্বপাড় বাজার, নড়াগাতী, নড়াইল যোগাযোগ: 01728-060690, 01933-200080, 01715422025 , ইমেইল: naragatirsangbad@gmail.com
Copyright © 2024 নড়াগাতীর সংবাদ. All rights reserved.