নাজনীন আক্তার গড়ে তুলেছেন মাতৃ স্নেহ প্রতিবন্ধি উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি মানবিক ব্যতিক্রমি প্রতিষ্ঠান।
সন্তান কানা খুঁড়া বোবা,যে কোন প্রতিবন্ধি হোক না কেন একজন মা কখনো পারেনা তার সন্তান কে অবহেলা অভঙ্গা করতে বরং প্রতি বন্ধি সন্তানটির জন্যই মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি, এজন্য বলে মায়ের মতো আপন কেহ নাইরে দুনিয়ায়, এই সত্যি কথা টা আবার ও প্রমান করলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের লোহাইড় গ্রামের গৃহবধূ নাজনীন আক্তার।
নাজনীন আক্তার ছোট বেলা থেকে নিজের উপর নির্ভর করে পথ চলতে পছন্দ করেন।এসএসসি পাশ করার পর তাকে তার পরিবারের সম্মতিতে লোহাইড় গ্রামে আতিয়ার রহমান নামে মধ্যবিত্ত ঘরের কৃষক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিবাহের একবছর পরে তার কোল জুড়ে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়!কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শিশুটি যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন দেখা যায় সে শারিরীক প্রতিবন্ধি তখন শিশুর মা নাজনীন ভাবতে থাকেন শিশু কে নিয়ে কি করা যায়। কারন প্রতিবন্ধি শিশু জন্ম দেওয়ার কারনে মা বাবা ছাড়া পরিবারের সবাই শিশু টিকে অভঙ্গার চোখে দেখতে থাকে। নাজনিন আক্তার খুব দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন আর ভাবতে থাকেন শিশু কে নিয়ে কি করা যায়।
এর পর থেকে ছেলে কে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে থাকেন কিন্তু ডাক্তার বলে দেন সে আর কোন দিন হাটতে পারবে না? তার পর ও মা নাজনীন আক্তার হাল ছেড়ে না দিয়ে স্বামীর অভাব অনটন সংসার হওয়া সত্বেও সন্তানের সুস্থতার প্রত্যায় নিয়ে ঢাকাস্হ তিনি প্রতিবন্ধি প্রতিষ্ঠান থেকে সর্ট প্রশিক্ষন গ্রহন করে নিজের সন্তানের পরিচর্যা সহ সমাজের আরো কিছু প্রতিবন্ধিদের মানবিক সেবা দানের লক্ষে বনগ্রাম মাটিয়া ব্রিজ সংলগ্ন দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি মাতৃ স্নেহ প্রতিবন্ধি উন্নয়ন সংস্থার নামে একটি প্রতিবন্ধি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
২০২০ সালে মাত্র ৫ জন প্রতিবন্ধি নিয়ে কাজ শুরু করেন, কিছু দিনের মধ্যে ৮১ জন বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধি শিশুদের কে নিয়ে সেবা দিতে থাকেন। কিছু দিন পর লক্ষ করা যায় নাজনিনের ৪ বছরের শিশু টি অন্যের সাহায্য ছাড়াই হাটতে পারে!অন্যন্য শিশুদের মায়েদের সাথে আলাপকালে জানা যায় তাদের সন্তানদের ও উন্নতি দেখা যাচ্ছে। নাজনীন জানান তার দরিদ্র স্বামী মাসে তিন হাজর টাকা করে দিতেন তা দিয়েই কোন রকম সংসার চালাতেন।
শিশুদের ভালো সেবা দেওয়ার জন্য অনেক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন কিন্তু তা তিনি সংগ্রহ করতে পারছেন না?তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের রহমান রাশেদের নিকট আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করলে তিনি আর্থিক সাহায্য করেন সে অর্থ দিয়ে তিনি প্রশিক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় করে কিছুটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।নাজনীন জানান এতোগুলো শিশু কে একা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।
পারিশ্রমিক ছাড়াই আমার আপন দুই বোন এক প্রতিবন্ধির মা মাবিয়া আমাকে সাহায্য করে। নাজনীন জানান আমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হুইল চেয়ার, শীতের কম্বল প্রতিবন্ধিদের জন্য এনে দিয়ে ছিলাম।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এর কিছু দিন পর আমার স্বামীর দুটি কিডনিই অকেজো ধরা পড়ে শুরু হয় তাকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে দৌড়া দৌড়ী এবং প্রায় একবছর যাবৎ তাকে তার কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হয় এতে আমার স্থাবর অস্তবর সব কিছু শেষ করি অবশেষে সে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ২৫ জুন ২০২৩ তারিখে না ফেরার দেশে চলে যায়।
আমি নিঃস্ব নিস্তব্ধ অসহায় হয়ে পড়ি এবং কারন বসত স্বামীর মৃত্যুর পর বাবার বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হই! তাই বেশ কিছু দিন পর নিজের সন্তানের ও অন্যন্য প্রতিবন্ধি সন্তানের কথা চিন্তা করে আবার মাতৃ স্নেহ প্রতিবন্ধি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠানটি চালু করি।
কিন্তু অর্থের অভাবে অনেক কিছুই সম্ভব হচ্ছে না তাই সামাজের ধন্যাঢ্য ব্যক্তি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে সমাজের প্রতিবন্ধি অসহায় শিশুর মুখে হাসি ফুটাতে পারি। সেই সথে দেশের সাবার সাহায্য সহযোগীতা কামনা করছি আপনারা এই প্রতিবন্ধি শিশুদের পাশে দাড়ালে প্রতিষ্ঠানটি আবার মানবিক সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর!