গত ১০ মে ২০২৪ তারিখ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে কতিপয় দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা করে ও এলোপাথারি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় ভিকটিম মোস্তফা কামাল মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নম্বর- ১৪/১২৬ তারিখ ১৩ মে ২০২৪। একজন সাবেক ইউপি সদস্য হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাতে র্যাব-৬, র্যাব-৭ এবং র্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রামের বায়েজীদ ও নড়াইল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যতম আসামি ও শুটার ১। সাজেদুল মল্লিক (২৫), পিতাঃ মঞ্জুর মল্লিক, লোহাগড়া, নড়াইল, ২। পাভেল শেখ (২৮), পিতাঃ হাবিবার শেখ, লোহাগড়া, নড়াইল, ৩। মামুন মোল্যা (২৬), পিতাঃ মান্নান মোল্যা, নড়াইল ও ৪। মোঃ রহমত উল্লাহ শেখ (১৯), পিতাঃ বিল্লাল হোসেন, লোহাগড়া, নড়াইলদের’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে। ভিকটিম নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপন এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা বিরাজমান ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভিকটিম মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপন এর অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হয় এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরবর্তীতে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামাল এর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়ীতে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা ভিকটিম মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধায় গ্রেফতারকৃত সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ওৎ পেতে থাকে। ভিকটিম মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলের হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে ০৩ রাউন্ড গুলি করে; যার মধ্যে ০২ রাউন্ড গুলি ভিকটিমের বুকে ও পিঠে লাগে এবং গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলসহ অন্যান্য সহযোগী আসামিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা, পতেঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে এবং আত্মগোপনে থাকাকালীন অবস্থায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সাজেদুল, পাভেল ও মামুন র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাজেদুল এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত রহমত উল্লাহকে নড়াইল থেকে গ্রেফতার করা হয়। উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য আসামি গ্রেফতারসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত সাজেদুল স্থানীয় একটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর ১ম বর্ষের ছাত্র। সে আকবর হোসেন লিপন এর অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি, চুরি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ০৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত রহমত উল্লাহ শেখ পেশায় একজন শ্রমিক। সে গ্রেফতারকৃত সাজেদুল এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ মারামারি, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত সাজেদুল এর সহযোগী হিসেবে তাকে উক্ত হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য ১ লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং হত্যাকান্ডের সময় সে গ্রেফতারকৃত সাজেদুল সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি সংক্রান্ত ০১টি মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত পাভেল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এইচএচসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে লিপনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ০৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মামুন মোল্যা পেশায় একজন চালক। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার কাছে থাকা ছুরি চাকু সহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে ভিকটিম মোস্তফা কামালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ০২টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।