ডেক্স নিউজ
কুষ্টিয়ায় ঘটে চলেছে একের পর এক সাংবাদিকদের উপর হামলা, জীবন দিতে হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিককে ২০২২ সালে খুন হয়েছিলেন দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। তবে এ বছর সর্বশেষ সাংবাদিকের ওপর নির্মম হামলার ঘটনা ঘটেছে ১৯ জুন। কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর বাজারে এশিয়ান টিভির কুষ্টিয়ায় কর্মরত স্টাফ রিপোর্টার ও স্থানীয় দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক হাসিবুর রহমান রিজুর ওপরে নৃশংস হামলা করে দুই হাত ও দুই পা ভেঙে শরীরে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত করে সন্ত্রাসীরা।
সিসি ক্যামেরার মধ্যে দেখা যায় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মম ভাবে জখম করে হাসিবুর রহমান রিজুকে, হামলার পরের দিন সাংবাদিক রিজুর স্ত্রী টপি বিশ্বাস বাদী হয়ে ১৬ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু এখনও ঢাকা ট্রমা (পঙ্গু) সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছেন। সাংবাদিকদের বিক্ষোভের পরে পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় ১৫ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া অন্য কোন আসামি এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি।
২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩ তারিখে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। ঠিক তারই ৪ দিন পর, ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদী থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চ্যানেল ২৪ ফোর এর স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাসকে অফিস থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা। পদ্মা নদীর মধ্যে এনটিভির কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলী’কে স্পিড বোর্ড থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে বালু উত্তোলনকারী সন্ত্রাসীরা। হামলার পরে বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন থানা এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন সাংবাদিকরা। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আন্দোলন করা হচ্ছে, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলছেন, সাংবাদিক নির্যাতনকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
সাংবাদিকরা বলছেন, যশোরের দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলকে ১৯৯৮ সালের ৩০ আগষ্ট যশোর বেজপাড়ায় বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুন হয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেড়ে চলেছে সাংবাদিক নির্যাতন।
সাংবাদিকরা বলছেন, যশোরের দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলকে ১৯৯৮ সালের ৩০ আগষ্ট যশোর বেজপাড়ায় বোমা মেরে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের খুন হয়েছেন ১৯ জন সাংবাদিক। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বেড়ে চলেছে সাংবাদিক নির্যাতন। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি মিলন উল্লাহ বলেন, যদি রুবেল হত্যার বিচার হতো তাহলে হাসিবুর রহমান রিজুর ওপর এই ধরণের নির্মম হামলার ঘটনা কোন হতো না।কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের (কেপিসি) সাধারণ সম্পাদক ও জিটিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবো না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজের) সহ-সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ বলেন, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার চেয়ে আমরা অসংখ্যবার বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ সহ কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মহাসমাবেশ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এরপরও বিচায় হয়নি, এটি দুঃখজনক। বিচারহীনতার জন্যই বারবার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কন্তি নাথ বলেন, আসামীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত ছিলো। আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।