বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে কারাগার থেকে বেরিয়ে ফখরুল
সাড়ে তিন মাস পর কারামুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে আসেন তারা। কারাগার থেকে বেরিয়েই চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব।
জেলগেটে অপেক্ষমাণ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে।’ গণতন্ত্র ফেরানোর চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ওরা (সরকার) রাষ্ট্রশক্তিকে কবজা করে ক্ষমতা দখল করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্বাচনে নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। যত দিন না দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে, তত দিন এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। পরের দিন ২৯ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এবং ২ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।
পরে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি এবং খসরুর বিরুদ্ধে দশটি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাটি ছাড়া সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়ে যান।
বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার মামলায় বিএনপি এই দুই শীর্ষ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে দুই নেতার আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার জামিন আদেশ, প্রোডাকশন ওয়ারেন্টসমূহ প্রত্যাহারের আদেশসমূহ সব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর বিকেলে মুক্তি পেলেন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।