পলি চৌধুরী জেলা প্রতিনিধি খুলনা
বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি অবলম্বন করলেও বৈশ্বিক রাজনীতি-অর্থনীতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং জাতীয় কতিপয় নিয়ামক ও ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে সন্ত্রাসবাদ নিয়মিত বিরতিতে বিস্তৃত হয়েছে।
বৈশ্বিক রাজনীতি ও স্থানীয় অনুঘটকসমূহের মিথষ্ক্রিয়ায় বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের যে ঝুঁকি অনুভূত হচ্ছে তা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগ ও বিচারিক প্রতিক্রিয়ার পরিচালনার পাশাপাশি একটি সহনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার।
উক্ত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত ৪ নভেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত ECNEC এর সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্ষমতা অর্জনে তার সরকারের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার প্রতিফলন স্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন কর্মশালা ও আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৫৭ টি জেলায় উগ্রবাদ প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক কর্মশালা ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার সকাল ১১:০০ ঘটিকায় বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র প্রকল্প, কাউন্টার এন্ড ন্যাশনাল ক্রাইম, ডিএমপি, ঢাকার আয়োজনে এবং খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও খুলনা জেলা পুলিশের সহযোগিতায় “সোনার বাংলার শপথ নিন, উগ্রবাদকে রুখে দিন” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উগ্রবাদ প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনের ভূমিকা শীর্ষক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উগ্রবাদ প্রতিরোধ শীর্ষক উক্ত সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিপিএএ। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সিটিটিসি, ডিএমপি, ঢাকার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার); বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। উগ্রবাদ প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনের ভূমিকা শীর্ষক সচেতনতামূলক সভা সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হেলাল মাহমুদ শরীফ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম(বার), পিপিএম; রেঞ্জ খুলনা ডিআইজি মইনুল হক বিপিএম (বার), পিপিএম; স্থানীয় সরকার বিভাগ, খুলনার উপসচিব জনাব ইউসুফ আলী; খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম এন্ড অপস্ ( পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুশান্ত সরকার।
পবিত্র কোনআন থেকে তেলাওয়াত ও ভগবত গীতা হতে পাঠের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। সচেতনতামূলক সভায় স্বাগত বক্তা সিটিটিসি, ডিএমপি, ঢাকার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান বিপিএম (বার) বাংলাদেশে উগ্রাবাদের সূচনা ইতিহাস, বিস্তার এবং প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে স্ব-বিস্তার আলোচনা পূর্বক জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান। বিশেষ বক্তা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ কোরআন ও সুন্নাহ এবং নবীজির (সঃ) এর জীবনি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জিহাদের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোকপাত করে উপস্থিত সকলকে জঙ্গিবাদের ছোবল থেকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, আফগানিস্তানে সোভিয়েত সরকারের পতনের পর বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় উগ্রবাদ ব্যাপক প্রসার লাভ করে। বাংলাদেশেও ২০০১ সাল হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জঙ্গিবাদের ব্যাপক উথান ঘটে। বাংলাদেশের ৬৩ টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল এবং হলি আর্টিজেন হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি পশ্চাদপদ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছিল। ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, তরবারির জোরে ইসলামের প্রসার হয়নি ইসলামের প্রসার হয়েছিল আখলাক এবং শান্তির বাণী প্রচারের মাধ্যমে। উগ্রপন্থীরা ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে তিনি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি হ্যালো কেএমপি অ্যাপস্ ও হ্যালো সিটি অ্যাপস্ ব্যবহার করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য আহবান জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় বলেন, সন্ত্রাসবাদের ক্রমপরিবর্তনশীল ধরনের কারণে এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের অস্তিত্ব লক্ষ করা গেলেও ধর্মাশ্রিত উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদই বর্তমান বিশ্বে সভ্যতার অন্যতম প্রধান হুমকিতে পরিণত হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকতা ও গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বর্তমান জঙ্গিবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। জঙ্গি দমনে প্রো-অ্যাক্টিভ পুলিশিংর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ স্থাপিত হয়েছে। উগ্রবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিষয়টি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে (Global Terrorism lndex) সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশ ধারাবহিকভাবে উন্নতি করে যাচ্ছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৩তম যা প্রমাণ করে যে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে ভালো অবস্থানে রয়েছে। সবশেষে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ শীর্ষক সচেতনতামূলক সভার সভাপতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আশা প্রকাশ করেন যে, সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বোচ্চ সচেতনতা, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও আন্তরিকতার মধ্যে দিয়ে উগ্রবাদ প্রতিরোধে নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে যা বাংলাদেশকে আরও নিরাপদ ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।