অনেকে বলে সুখ হলো – আনন্দ, আরাম, তৃপ্তি, স্বচ্ছন্দ্য ও সৌভাগ্য। আবার অনেকে বলে সুখ হলো মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
যাইহোক, প্রতিবছর ২০ মার্চ বিশ্ব সুখ দিবসে ‘সুখী দেশের তালিকা’ প্রকাশ করে জাতিসংঘ। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড হলো সবচেয়ে সুখী দেশ। পরপর ছয় বছর শীর্ষ অবস্থানে এই দেশটি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। চতুর্থ ইসরায়েল ও পঞ্চম নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে সুখী দেশের তালিকার তলানিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান।
এ বছর বিশ্ব সুখ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো —‘যূথবদ্ধ থাকাতেই সুখ’, অর্থাৎ একসঙ্গে মিলেমিশে থাকলে সুখী হওয়া যায়।
‘সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা। তবে সুখের সঙ্গে অর্থের সম্পর্ককে অস্বীকার করার উপায় নেই। ক্ষুধার্ত মানুষের খাওয়ার সুখ আর সংগীতপ্রেমী কারও গান শোনার সুখ কি এক হতে পারে? যতই বলা হোক ‘অর্থই অনর্থের মূল’, সুখ সূচকে তার প্রতিফলন খুবই স্পষ্ট।
মানুষ সুখ প্রত্যাশী, সবাই সুখী হতে চায়। তারপরও অনেকেই সুখের নাগাল খুঁজে পান না। মানুষের এই চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবছর ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ।
২০১২ সালের ২৮ জুন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশনে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। অধিবেশনে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিরা দিবসটিকে স্বীকৃতি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর বিশ্বের একাধিক দেশ নানা আয়োজনে দিনটি পালন করে আসছে।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের প্রস্তাবে বলা হয়, মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য সুখে থাকা। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিতে দিবসটি পালন করা হবে। এ ছাড়া সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ওপর পূর্ণ এক বছর জরিপ পরিচালনা করে এই দিবসে সুখী দেশের তালিকা প্রকাশ করে থাকে জাতিসংঘ।
দিবসটির প্রতিষ্ঠাতা জাতিসংঘের উপদেষ্টা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা অর্থনীতিবিদদের প্রতিনিধি জেম এলিয়েন। তবে আন্তর্জাতিক সুখ দিবস প্রচলনের প্রচারটি শুরু হয় মূলত আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভুটানের হাত ধরে। দেশটিতে ইতিমধ্যে সুখ-সূচকের ভিত্তিতে জাতীয় সমৃদ্ধির পরিমাপের প্রচলন করা হয়েছে। তারা জাতিসংঘের কাছে বছরের একটি দিন সুখ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানায়। এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘আন্তর্জাতিক সুখ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সুখী হওয়াটা এমন একটা ব্যাপার নয় যে, এটা এমনি এমনি ঘটে গেল। আপনাকে এজন্য অভ্যাস করে করে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে- বলেছেন, লুরি স্যান্তোস নামে মনোবিদ্যার একজন অধ্যাপক। মনোবিদ্যার এই নারী অধ্যাপক সুখী হওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন। বিবিসি সংবাদমাধ্যমে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। স্যান্তোস যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান তার নাম ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়। ইয়েলের ৩ শতকের ইতিহাসে তার ক্লাস ‘মনোবিদ্যা এবং সুখী জীবন’ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্স, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্তির রেকর্ড ভেঙে ১২০০ শিক্ষার্থী নিজেদের নাম লিখিয়েছেন।
স্যান্তোস বলেন, খারাপ লাগা বা দুঃখের বিষয়গুলোকে ভুলে যেতে হবে। সুখী হতে হলে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে। এটা সহজ কাজ নয়, সেজন্য সময় দরকার। তবে এটা করা সম্ভব।
অধ্যাপক স্যান্তোসের সেরা পাঁচটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো, যা অনুসরণ করার জন্য তিনি বলে থাকেন।
১. প্রাপ্তির একটি তালিকা করুন। অপ্রাপ্তির কথা না ভেবে জীবনের প্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞ হোন।
২. বেশি ঘুমান আর ভালো থাকুন। যিনি নিয়মিত পরিপূর্ণ বিশ্রাম পান, তার মন ভালো থাকে।
৩. ধ্যান করুন। কোন স্পা-তে যাওয়ার দরকার নেই, ঘরের কোন নীরব কোণে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করুন।
৪. পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আরো বেশি সময় কাটান। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কিছু একান্ত সময় কাটান।
৫. সামাজিক মাধ্যমে কম সময় দিন আর বাস্তব যোগাযোগ বাড়ান। ফোনকে দূরে সরিয়ে রেখে শারীরিকভাবে সক্রিয় হোন।
অর্থাৎ আপনি যদি জীবনে সত্যিই সুখী হতে চান, তাহলে প্রাপ্তির হিসাব দিয়ে শুরু করুন। রাতে চমৎকার একটি ঘুম দিন। মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে সরিয়ে মনোযোগী করুন। যেসব মানুষকে পছন্দ করেন, তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান আর সামাজিক মাধ্যম থেকে কিছুদিন বিরতি নিন।
সুখী দেশের তালিকায় ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৮তম অবস্থানে আছে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মামুন হাচান। মফস্বল সম্পাদক: শেখ মাহাবুব আলম। বার্তা সম্পাদক: এম এম হাচান। উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান। সহকারী বার্তা সম্পাদক: চৌধুরী জুয়েল রানা। খুলনা অফিস: মুজগুন্নী খালিশপুর খুলনা। নড়াইল অফিস: নড়াগাতী থানা পূর্বপাড় বাজার, নড়াগাতী, নড়াইল যোগাযোগ: 01728-060690, 01933-200080, 01715422025 , ইমেইল: naragatirsangbad@gmail.com
Copyright © 2024 নড়াগাতীর সংবাদ. All rights reserved.