দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় বসবাস করলেও মাথা গোঁজার ঠিকানা টুকুর সুরাহা মেলেনি বাস্তুহারার ১৬৯টি পরিবারের বাসিন্দাদের। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সার্ভে করার পরেও শান্তিতে নেই বাস্তুহারার সহায় সম্বল হীন দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলো। বছরের পর বছর সরকার পরিবর্তন হলেও অপেক্ষা আর আশ্বাসে অসহায় এ মানুষ গুলোর মাথা গোঁজার শেষ সম্বল টুকুর কোনো সমাধান না হওয়ায় বসবাসরত দরিদ্র এসব বাসিন্দাদের চোঁখে মুখে এখনও চিন্তার ভাঁজ ।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে কিছু অসহায়, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের বাসস্থানের লক্ষ্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বয়রা হাউজিং এস্টেটের বয়রা মৌজার বাস্তুহারা কলোনীতে বসবাসরত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ খুলনাস্থ বয়রা হাউজিং এস্টেটের “সি” ও “ই” ব্লকের ১৬৯ টি বস্তিবাসী পরিবারের বাসিন্দাদের সহ বাস্তহারার মোট ১৫০২ টি পরিবারের জন্য বয়রা বাস্তুহারা যৌথ সার্ভের লক্ষ্যে বিগত ১২ জানুয়ারী ২০১১ তারিখে জেলা প্রশাসক খুলনা ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিটি কর্পোরেশন ও বাস্তহারা কমিটির দুইজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক তদন্ত করে বস্তিবাসীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে এবং হাউজিং কর্তৃপক্ষ মোঃ নবীর উদ্দিন কে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। যে কমিটিতে লিউজা-উল-জান্নাহ, মোঃ জিয়াউর রহমান, এসকেএম তাসাদুজ্জামান, মোঃ হাফিজুর রহমান, সুব্রত সরকার, মোঃ মিজানুর রহমান, সৈয়দ কামরুজ্জামান প্রায় দুই মাস যৌথ সার্ভে শেষে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বয়রা হাউজিং এস্টেটের বয়রা মৌজার বাস্তুহারা কলোনিতে বসবাসরত পরিবারের জন্য পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প নির্মাণ ও প্লট বরাদ্দের জন্য যৌথ সার্ভে প্রতিবেদন তালিকা জমা দেন।
দীর্ঘ চার দশক ধরে বসবাস করে আসছেন দরিদ্র ও অসহায় এ পরিবারগুলো কিন্তু একটি পক্ষ বসবাসরত এসব পরিবারের লোকদেরকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন বাস্তুহারার এসব দরিদ্র মানুষেরা। কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের মাথা গোজার ঠাঁই টুকু উচ্ছেদ না করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান তারা। বাস্তুহারার এই ১৬৯ টি পরিবারের যৌথ সার্ভের মাধ্যমে হস্তান্তরের পরেও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৭ সালে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের মধ্যে ২.৫০ কাঠা আয়তনের ৪২টি প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ঐ প্লটের মধ্যে প্রায় ১৪টি প্লটের বরাদ্দ প্রাপকের অনুকূলে লীজ ডীডচুক্তি সম্পন্ন করা হয়। বাকি ২৮টি দখল হস্তান্তর করা হয়েছে কিন্তু লীজ ডিড সম্পন্ন হয় নাই। উক্ত ৪২টি প্লটের মধ্যে ১৬৯ জন বস্তিবাসী দীর্ঘদিন বসবাস করায় বরাদ্ধ গ্রহীতাদের সংশ্লিষ্ট প্লট সমূহ বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। মহামান্য হাই কোট কর্তৃক বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ পূর্বক সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ প্রাপকগণকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন, কিন্ত বস্তিবাসী বসবাস করায় উক্ত প্লটগুলি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি ।
এরই ধারাবাহিকতায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উচ্ছেদের ঘোষণায় আবারো দিশেহারা এসব প্লটে বসবাসরত বাসিন্দারা। যে কারণে গত ১০ ডিসেম্বর খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান তারা।